হযরত মূসা (আঃ) এর জীবনী | Biography of Musa nobi | Nhrepon.com





হযরত মূসা (আঃ)



(খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)

প্রাচীন মিসরের রাজধানী ছিল পেণ্টাটিউক। নিল নদের তীরে এই নগরে বাস করতেন মিসরের “ফেরাউন” রামেসিস। নগরের শেষ প্রান্তে ইহুদীদের বসতি। মিসরের ফেরাউন ছিলেন ইহুদীদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন। 

একবার কয়েক জন জ্যোতিষী গণনা করে তাকে বলেছিলেন, ইহুদী পরিবারের মধ্যে এমন এক সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে যে ভবিষ্যতে মিশরের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।


জ্যোতিষীদের কথা শুনে ভীত হয়ে পড়লেন ফেরাউন। তাই ফেরাউন আদেশ ‍দিলেন কোন ইহুদী পরিবারে সন্তান জন্ম গ্রহণ করলেই যেন হত্যা করা হয়।


ফেরাউন এর গুপ্তচররা চার দিকে ঘুরে বেড়াত। যখনই কোন পরিবারে সন্তাস জন্মাবার সংবাদ পেত তখনই গিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করত।


ইহুদী মহল্লায় বাস করতেন আসরাম আর জোশিবেদ নামে এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি। যথা সময়ে জোসিবেদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করল। 

সন্তান জন্মাবার পরই স্বামী-স্ত্রীর মনে হল যেমন করেই হোক এই সন্তান কে রক্ষা করতে হবে। কে বলতে পারে এই সন্তানই হয়ত ইহুদী জাতিকে সমস্ত নির্যাতন থেকে রক্ষা করবে একদিন।



সকলের চোখের আড়ালে সম্পূর্ণ গোপনে শিশু সন্তান কে বড় করে তুলতে লাগলেন আসরাপ আর জোশিবেদ। কিন্তু বেশি দিন এই সংবাদ গোপন রাখা গেল না। 

স্বামী-স্ত্রী বুঝতে পারলেন যে কোন মুহূর্তে ফেরাউনের সৈনিকরা এসে তাদের সন্তান কে তুলে নিয়ে যাবে।

ইশ্বর আর ভাগ্যের হাতে শিশুকে সঁপে দিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়লেন। নীল নদের তীরে এক নির্জন ঘাটে এসে শিশুকে সুইয়ে ‍দিয়ে তারা বাড়ি ফিরে গেলেন।



সেই নদীর ঘাটে প্রতিদিন গোসল করতে আসত ফেরাউনের স্ত্রী। ফুটফটে সুন্দর একটা বাচ্চাকে একা পড়ে থাকতে দেখে তার মায়া হল। তাকে তুলে নিয়ে এল রাজপ্রাসাদে। 

তার পর সেই শিশু সন্তানকে নিজের সন্তানের মত স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করে তুলতে লাগল। রাণী শিশুর নাম রাখল মূসা।


এ বিষয়ে আরেকটি কাহিনী প্রচলিত। মূসার মা জোশিবেদ জানতেন প্রতিদিন ফেরাউনের স্ত্রী সখিদের নিয়ে নদীতে স্নান করতে আসেন। 

একদিন পথের ধারে শিশু মূসাকে একটা ঝুড়িতে করে শুইয়ে রেখে দিলেন। নিজে গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন। 

কিছুক্ষন পর রাণী সেই পথ দিয়ে স্নান করতে যাবার সময় দেখতে পেল মূসাকে। পথের পাশে ফুটফুটে একটা শিশুকে পড়ে থাকতে দেখে তার মায়া হল।

তাড়াতাড়ি মূসাকে কোলে তুলে নিল। জোশিবেদকেই মূসার ধাত্রী হিসেবে নিয়োগ করে রাজকুমারী। 

নিজের পরিচয় গোপন করে রাজপ্রাসাদে মূসাকে দেখা শুনা করতে থাকে জোশিবেদ। মা ছাড়া মূসা আর কোনা নারীর স্তন্য পান করেনি।


ধীরে ধীরে কৈশর থেকে যৌবনে পা দিলেন মূসা। ফেরাউনের অত্যাচার বেড়েই চলছিল। ইহুদিদের উপর এ অত্যাচার ভালো লাগত না মূসার। 

পুত্রের মনোভাব জানতে পেরে একদিন জোশিবেদ তার কাছে নিজের পরিচয় দিলেন। তার পর থেকে মূসার অন্তরে শুরু হল নিধারুন যন্ত্রনা।


একদিন রাজপথ ‍দিয়ে যাচ্ছিলেন মূসা। এমন সময় তার চোখে পড়ল এক হতভাগ্য ইহুদিকে নির্মমভাবে প্রহার করছে তার মিসরীয় মনিব। 

এই দৃশ্য দেখে আর স্থির থাকতে পারলেন না মূসা। তিনি সেই ইহুদিকে উদ্ধার করার জন্য নিজের হাতে তরবারী দিয়ে আঘাত করলেন মিসরীর মনিবকে। 

সেই আঘাতে মারা গেল মিসরীয় লোকটি। ইহুদী লোকটি চার দিকে এ কথা টি প্রকাশ করে দিল। গুপ্ত চররা ফেরাউনকে গিয়ে সংবাদ টি দিতেই ক্রোধে ফেটে পড়লেন ফেরাউন।

তিনি বুঝতে পারলেন রাজকন্যা মূসাকে মানুষ করলেও তার শরীরে বইছে ইহুদী রক্ত, তাই নিজের ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচার হতে দেখে মিসরীয় কে হত্যা করেছে। 

একে যদি মুক্ত রাখা হয় তাহলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তখনই সৈনিকদের ডেকে হুকুম দিলেন, যেখান থেকে হোক মূসাকে বন্দী করে নিয়ে এস।


ফেরাউনের আদেশ শুনে আর বিলম্ভ করলেন না মূসা। তৎক্ষনাৎ নগর ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়লেন মূসা।

দীর্ঘ পথ শ্রমে মূসা ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ছিলেন। তার চোখে পড়ল দূরে একটি কুয়ো। কুয়োর সামনে সাতটি মেয়ে তাদের ভেঁড়া গুলো কে পানি খাওয়াচ্ছিল। 

হঠাৎ একদল মেষ পালক সেখানে এসে মেয়েদের কাছ থেকে জোর করে ভেঁড়া গুলিকে কেড়ে নিল। সাথে সাথে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল সাত বোন। 


তাদের চিৎকার শুনে ছুটে এলেন মূসা। তার পর মেষ পালকদের কাছ থেকে সব কটা ভেঁড়া উদ্ধার করে মেয়েদের ফিরিয়ে দিলেন। মেয়েরা তাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।

সাত বোনের বাবার নাম ছিল রুয়েন। তারা বাড়ি পিরে তাদের বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলল। তাদের বাবা তাদের কে বললেন পরদিন মূসার সাথে দেখা হলে তাকে বাড়িতে ডেকে আনতে।

পরদিন সাত বোন এসে মূসাকে তাদের বাবার আমন্ত্রনের কথা জানাল। মূসা তাদের কথা মত তাদের বাবার আমন্ত্রনে তাদের সাথে বাড়িতে গেলেন। 

তার পরনের মূল্যবান পোশাক, সম্ভ্রমপূর্ণ ব্যবহার দেখে সকলেই মুগ্ধ হয়ে গেল। রুয়েন তার পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই কোন কথা গোপন করলেন না মূসা। অকপটে নিজের পরিচয় বলে দিলেন।

রুয়েন তাকে চিনতে পারলেন এবং তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিলেন। কিছুদিন পর একমেয়ের সাথে তার বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। 

মূসা রাজি হয়ে গেলেন এবং রুয়েনের এক মেয়ের সাথে মূসার বিবাহ সম্পন্ন হলো।

তাদের সাথে থাকতে থাকতে অল্প কিছুদিনের মধ্যে মেষ চরানো শিখে পেললেন মূসা। এক নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মানেয়ে নিলেন। 

দেখতে দেখতে বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। ও দিকে মিশরে ইহুদিদের অবস্থা ক্রমশই দূর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। এখানে পশু পালকের জীবন যাপন করলেও স্বজাতীর কথা ভুলতে পারেন নি মূসা। মাঝে মাঝেই তার সমস্ত অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠত।

একদিন মেষের পাল নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে নির্জন পাহাড়ের প্রান্তে এসে পৌঁছলেন মূসা। সামনেই বেশ কিছু গাছ পালা। হঠাৎ মূসা দেখলেন সেই গাছ পালা আর পাহাড়ের মধ্য থেকে এক আলোকছটা বেরিয়ে এল। 

এক তীব্র আলো মনে হল দুচোখ যেন জলসে যাচ্ছে। তবুও তিনি স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন সেই আলোর দিকে। তার মনে হলো ঐ আলো যেন তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। 

এক সময় শুনতে পেলেন সেই আলোর মধ্য থেকে এক অলৌকিক কণ্ঠস্বর ভেসে এল, মূসা....মূসা....।

চমকে উঠলেন মূসা। কেউ তারই নাম ধরে ডাকছে। তৎক্ষনাৎ সাড়া দিলেন, কে আপনি আমায় ডাকছেন? সেই অলৌকিক কণ্ঠস্বর বলে উঠল, আমি তোমার ও তোমার পূর্ব পুরুষদের একমাত্র ঈশ্বর।

ঈশ্বর তার সাথে কথা বলছেন, এ যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মূসা। ভীত হয়ে মাটিতে নতজানু হয়ে বসে পড়লেন। আমার কাছে আপনার কি প্রয়োজন প্রভু?

দৈব কণ্ঠস্বর বলল, তুমি আমার প্রতিনিধি হিসেবে মিশরে যাও। সেখানে ইহুদিরা অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করছে। তুমি ইহুদিদের মুক্ত করে নতুন দেশে নিয়ে যাবে।

মূসা বললেন আমি কেমন করে তাদের মুক্ত করব?

দৈববাণী বলল, আমি অদৃশ্যভাবে তোমাকে সাহায্য করব। তুমি ফেরাউনের কাছে গিয়ে বলবে, আমিই তোমাকে প্রেরণ করেছি। সকলেই যেন তোমার আদেশ মেনে চলে।

মূসা বললেন, কিন্তু যখন তারা জিজ্ঞেস করবে ঈশ্বরের নাম তখন কি জবাব দিব?

প্রথমেই ঈশ্বর তার নাম প্রকাশ না করলেও পরে তিনি বললেন তিনি এই বিশ্ব জগতের স্রষ্টা আল্লাহ।

মূসা অনুভব করলেন তার নিজের শক্তিতে নয়, আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিতেই তাকে সমস্ত কাজ সমাধান করতে হবে। এতদিন আল্লাহ সম্বন্ধে তার কোন স্পষ্ট ধারণা ছিল না। 

এই প্রথম অনুভব করলেন আল্লাহর নির্দিষ্ট কাজের জন্যই তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। আর আল্লাহ তার একমাত্র ঈশ্বর।

এর কয়েকদিন পর দ্বিতীয়বার ঈশ্বরের আদেশ পেলেন মূসা। তিনি পূনরায় আবির্ভূত হলেন মূসার সামনে। তার পর বললেন তোমার উপর আমি প্রসন্ন হয়েছি। 

তুমিই পারবে ইহুদি জাতিকে এই সংকট থেকে উদ্ধার করতে। আর বিলম্ব কর না, যত শীঘ্র সম্ভব রওনা হও মিশরে। 

অল্প কয়েকদিন পর স্ত্রী-সন্তানদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিশরের পথে যাত্রা করলেন মূসা।

যথাসময়ে মিশরে গিয়ে পৌছলেন মূসা। গিয়ে দেখলেন সত্যি সত্যিই ইহুদিরা অবর্ণনীয় দুরবস্থার মধ্যে বাস করছে।

মূসা প্রথমেই সাক্ষাৎ করলেন ইহুদিদের প্রধান নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে। তাদের সকলকে বললেন ঈশ্বরের আদেশের কথা। 

মূসার আচার-আচরণ, তার ব্যক্তিত্ব, আন্তারিক ব্যবহার, গভীর আত্মপ্রত্যয় দেখে সকলেই তাকে বিশ্বাস করল।

মূসা বললেন, আমরা ফেরাউনের কাছে গিয়ে দেশ ত্যাগ করার অনুমতি প্রার্থনা করব। মূসা তার ভাই এ্যাবন ও কয়েকজন ইহুদি নেতাকে সাথে নিয়ে হাজির হলেন ফেরাউনের দরবারে। 

মূসা জানতেন সরাসরি দেশত্যাগের অনুমতি চাইলে কখনই ফেরাউন সেই অনুমতি দেবে না। তাই তিনি বললেন, সম্রাট, আমাদের স্রষ্টা আদেশ দিয়েছেন, সমস্ত ইহুদিকে মরুপ্রান্তরে এক পাহাড়ে গিয়ে প্রার্থনা করতে। আপনি যদি কয়েক দিনের জন্য সেখানে যাবার অনুমতি দেন।

ফেরাউন মূসার অনুরোধে সাড়া দিলেন। ক্রুদ্ধ স্বরে বলে উঠলেন, তোমাদের আল্লাহর আদেশ আমি মানি না। তোমরা মিশর ত্যাগ করে কোথাও যেতে পারবে না।

মূসা বললেন, আমরা যদি মরুভূমিতে গিয়ে প্রার্থনা না করি তবে তিনি আমাদের উপর ক্রুদ্ধ হবেন। হয়ত আমাদের সকলকে ধ্বংস করে ফেলবেন।

ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলেন মূসা। কি করবেন কিছুই ভাবতে পারছিলেন না। শেষে নিরুপায় হয়ে আল্লাহর কাছে আকুল হয়ে প্রার্থনা করলেন। 

তার প্রার্থনায় সাড়া দিলেন আল্লাহ। তিনি মূসা কে বললেন, তোমার ভাই এ্যারন কে বল, সে যেন নদী, জলাশয়, পুকুর, ঝর্নায় গিয়ে তার জাদু দন্ড স্পর্শ করে, তাহলেই দেখবে সমস্ত পানি রক্ত হয়ে গিয়েছে।

আল্লাহর নির্দেশে এ্যারন মিসরের সমস্ত পানীয় জল কে রক্তে রুপান্তরিত করে ফেলল। ফেরাউন আদেশ দিলেন মাটি খুড়ে পানি বার কর।

সৈনিকরা অসংখ্য কূপ খুঁড়ে ফেলল। সকলে সেই জল পান করতে আরম্ভ করল। এ্যারনের জাদু বিফল বিফল হতেই মূসা পুনরায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন।

এই মিশর জুড়ে ব্যাঙের মহামারী দেখা গেল। তার পঁচা গন্ধে লোকের প্রানান্তরক অবস্থা। কেউ আর ঘরে থাকতে পারে না। 

সকলে গিয়ে ফেরাউনের কাছে নালিশ জানাল। নিরুপায় হয়ে ফেরাউন ডেকে পাঠালেন মূসাকে। বললেন, তুমি ব্যঙের মড়ক বন্ধ কর। আমি তোমাদের মরুভূমিতে গিয়ে প্রার্থনা করার অনুমতি দেব।

মূসার ইচ্ছায় ব্যঙের মড়ক বন্ধ হলেও, ফেরাউন নানা অজুহাতে ইহুদিদের যাওয়ার অনুমতি দিলেন না। নিরুপায় হয়ে মূসা আবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। 

ফেরাউনের এই আচরণে এইবার ভয়ংকর ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন আল্লাহ। সমস্ত মিশর জুড়ে শুরু হল ঝড়-ঝঞ্ঝা বৃষ্টি মহামারী। তবুও ফেরাউন অনুমতি দিতে চান না।

এইবার আল্লাহ নির্মম অস্ত্র প্রয়োগ করলেন। হঠাৎ সমস্ত মিশরীয়দের প্রথম পুত্র সন্তান মারা পড়ল। দেশ জুড়ে শুরু হল হাহাকার। 

সমস্ত মিশরীয়রা দলবদ্ধভাবে ফেরাউনের কাছে গিয়ে দাবি জানাল, ইহুদিদের দেশ ছাড়ার অনুমতি দিন। না হলে আরও কি গুরুতর সর্বনাশ হবে কে জানে।

ভয় পেয়ে গেলেন ফেরাউন। ফেরাউন মূসা কে ডেকে বললেন, প্রার্থনা করার জন্য তোমাদের কে মরুভূমিতে যাবার অনুমতি দিচ্ছি। 

যদি মনে কর তোমাদের যা কিছু আছে, গৃহপালিত গবাদি পশু, জীবজন্তু, জিনিস পত্র সব সাথে নিয়ে যেতে পার।

দেশত্যাগের অনুমতি পেয়ে ইহুদিরা সবাই আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠল। তারা সকলেই মূসাকে তাদের নেতা বলে স্বীকার করে নিল।

মিশর ছাড়াও মাকুম নগরে বহু ইহুদি বাস করত। সকলে দলবদ্ধভাবে মূসাকে অনুসরণ করল।

মূসা জানতেন আল্লাহর শাস্তির ভয়ে ফেরাউন দেশ ত্যাগের অনুমতি দিলেও, তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করবেন যাতে তাদের যাত্রা পথে বাধা সৃষ্টি করা যায়। তাই যথা সম্ভব সতর্কভাবে পথ চলতে লাগলেন।

কয়েকদিন চলার পর তারা সকলেই এসে পড়ল লোহিত সাগরের তীরে।

এদিকে ইহুদিরা মিশর ত্যাগ করতেই ফেরাউনের পরিবর্তন ঘটল। যেমন করে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসে ক্রীতদাসে পরিণত করতে হবে। তৎক্ষণাৎ ইহুদিদের বন্দি করবার জন্য বিশাল এক সৈন্যবাহিনীকে পাঠালেন ফেরাউন।

এদিকে দূর থেকে মিশরীয় সৈন্যদের দেখতে পেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল সমস্ত ইহুদিরা। সামান্যতম বিচলিত হলেন না মূসা।

প্রার্থনায় বসলেন মূসা। প্রর্থনা শেষ হতেই দৈব বাণী হল, মূসা, তোমার হাতের দণ্ড তুলে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে যাবে তোমাদের কে সমুদ্রের পানি স্পর্শ করবে না।

মূসা তার হাতের দণ্ড তুলে সমুদ্রের সামনে এসে দাঁড়াতেই সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। তার মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়েছে প্রশান্ত পথ। সকলের আগে মূসা রওনা হলেন। তার পিছনে সমস্ত নারী-পুরুষের দল সেই পথ ধরে এগিয়ে চলল। 

তারা কিছুদূর যেতেই মিশরীয় সৈন্যরা এসে পড়ল সমুদ্রের তীরে। ইহুদিদের সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে যেতে দেখে তারাও তাদের অনুসরণ করে সেই পথ ধরে এগিয়ে চলল। 

সমস্ত মিশরীয় বাহিনী নেমে আসতেই আল্লাহর নির্দেশ শুনতে পেলেন মূসা, তোমার হাতের দণ্ড পিছনে পিরে নামিয়ে দাও। মূসা তার হাতের দণ্ড নিচু করতেই সমুদ্রের জলরাশি এসে আছরে পড়ল মিশরীয় সৈন্যদের উপর। 

মুহূর্তেই বিশাল সৈন্য বাহিনী সমুদ্রের অতল গহরে হারিয়ে গেল। ইতিমধ্যে ইহুদিরা নিরাপদে তীরে গিয়ে পৌছলেন। মূসা সকলকে নিয়ে এগিয়ে চললেন। 

সামনে বিশাল মরুভূমি। সামান্য পথ অতিক্রম করতেই তাদের সঞ্চিত পানি এবং খাবার ফুরিয়ে গেল। 

মরুভূমির বুকে কোথাও পানির চিহ্ন মাত্র নেই। ক্রমশই সকলে তৃষ্ণার্ত এবং ক্ষুদার্ত হয়ে পড়ছিল। অনেকে আর অগ্রসর হতে চাইছিল না।

মূসা বিচলিত হয়ে পড়লেন। এত গুলো মানুষ কে কোথা থেকে তৃষ্ণার পানি দিবেন। কিছুদূর যেতেই এক যায়গায় পানি পাওয়া গেল। 

এত দূর্গন্ধ সেই পানি কার সাধ্য তা মুখে দেয়। প্রার্থনায় বসলেন মূসা। প্রার্থনা শেষ করে আল্লাহর নির্দেশে কিছু গাছের পাতা ফেলে দিলেন সেই পানির মধ্যে। 

সাথে সাথে সেই পানি সুস্বাধু পানিয় হয়ে উঠল। সকলে তৃষ্ণা মিটিয়ে সব পাত্র ভলে নিল। যারা মূসা কে দোষারপ করছিল, তারা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চাইল। 

সকলে মূসা কে তাদের ধর্ম গুরু এবং নেতা হিসেবে স্বীকার করে নিল। সকলে তার নির্দেশ মতে এগিয়ে চলল। কিছুদিনের মধ্যে সমস্ত খাবার ফুরিয়ে গেল। 

আসে পাশে কোথাও কোন খাবারের সন্ধান পাওয়া গেল না। খিদের জ্বালায় সকলে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। আবার তারা দোষারপ করতে আরম্ভ করল মূসাকে। তোমার জন্যই আমাদের এত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।

মূসা সকলকে শান্ত করে বললেন, তোমরা ভুলে গেছ আমাদের রব আল্লাহর কথা? তিনে ফেরাউনকে তোমাদের দেশ ত্যাগের অনুমতি দিতে বাধ্য করেছেন। 

তিনি সমুদ্র কে দ্বিখণ্ডিত করেছেন, সৈন্যদের হাত থেকে তোমাদের কে রক্ষা করেছেন। তোমাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করেছেন। তবুও তোমরা তার শক্তিতে সন্দেহ প্রকাশ করছ।

মূসার কথা শেষ হতেই কোথা হতে সেখানে উড়ে আসে অসংখ্য পাখির ঝাঁক। ইহুদিরা ইচ্ছা মত পাখি মেরে মাংস খায়। আর কারও মনে কোন সংশয় থাকে না। 

মূসা তাদের অবিসংবাদিত নেতা। সকলে শপথ করে জীবনে মরনে তারা মূসার সমস্ত আদেশ মেনে চলবে।

মূসা সমস্ত ইহুদিদের নিয়ে এলেন এফিডিম নামে এক নির্জন প্রান্তে। চারদিকে ধু ধু বালি, মাঝে মাঝে ছোট পাহাড়, কোথাও পানির কোন উৎস নাই।







5 comments:

  1. অনুপ্রেরণা ও সফলতার গল্প, শিক্ষামূলক ছোট গল্প, ইসলামিক ঘটনা, মোটিভেশনাল উক্তি, রহস্য গল্প এবং অবাক করা সব ঘটনা পড়তে ভিজিট করুন অনুপ্রেরণা ডটকম।

    ReplyDelete
  2. জাযাকাল্লাহ

    ReplyDelete
  3. ফেরাউনের স্ত্রী না বড় ফেরাউনের মেয়ে মুসা আ: কে পালন করে। উনার নাম ছিল বিথীয়া উনার মৃত সন্তান পানিতে ভাসিয়ে দিতে এসে মুসা আ: কে পায়। বড় ফেরাউন মারা যায় তার ছেলে ফেরাউন হয়। মুসা আ: যত ফাইট হয়েছে তা হয়েছে তার পালিত মামা ফেরাউনের সাথে। আরও অনেক ভুল আছে। যেমন মুসা আ: জানতেন না তার মা বাবা কে। আল্লাহ তার ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মুসা আ: আপন বোন দেখে যে প্রিন্সেস বিথীয়া মুসা আ: কে নিয়ে যাচ্ছে রাজ প্রসাদে। পরে বিথীয়া নিজেই উদ্যোগ নিয়ে মায়ের দুধের ব্যবস্থা করে দেয়।

    ReplyDelete