হযরত মূসা (আঃ) এর জীবনী | Biography of Musa nobi | Nhrepon.com





হযরত মূসা (আঃ)



(খ্রীষ্ট পূর্ব ত্রয়োদশ শতাব্দী)

প্রাচীন মিসরের রাজধানী ছিল পেণ্টাটিউক। নিল নদের তীরে এই নগরে বাস করতেন মিসরের “ফেরাউন” রামেসিস। নগরের শেষ প্রান্তে ইহুদীদের বসতি। মিসরের ফেরাউন ছিলেন ইহুদীদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন। 

একবার কয়েক জন জ্যোতিষী গণনা করে তাকে বলেছিলেন, ইহুদী পরিবারের মধ্যে এমন এক সন্তান জন্ম গ্রহণ করবে যে ভবিষ্যতে মিশরের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।


জ্যোতিষীদের কথা শুনে ভীত হয়ে পড়লেন ফেরাউন। তাই ফেরাউন আদেশ ‍দিলেন কোন ইহুদী পরিবারে সন্তান জন্ম গ্রহণ করলেই যেন হত্যা করা হয়।


ফেরাউন এর গুপ্তচররা চার দিকে ঘুরে বেড়াত। যখনই কোন পরিবারে সন্তাস জন্মাবার সংবাদ পেত তখনই গিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করত।


ইহুদী মহল্লায় বাস করতেন আসরাম আর জোশিবেদ নামে এক সদ্য বিবাহিত দম্পতি। যথা সময়ে জোসিবেদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করল। 

সন্তান জন্মাবার পরই স্বামী-স্ত্রীর মনে হল যেমন করেই হোক এই সন্তান কে রক্ষা করতে হবে। কে বলতে পারে এই সন্তানই হয়ত ইহুদী জাতিকে সমস্ত নির্যাতন থেকে রক্ষা করবে একদিন।



সকলের চোখের আড়ালে সম্পূর্ণ গোপনে শিশু সন্তান কে বড় করে তুলতে লাগলেন আসরাপ আর জোশিবেদ। কিন্তু বেশি দিন এই সংবাদ গোপন রাখা গেল না। 

স্বামী-স্ত্রী বুঝতে পারলেন যে কোন মুহূর্তে ফেরাউনের সৈনিকরা এসে তাদের সন্তান কে তুলে নিয়ে যাবে।

ইশ্বর আর ভাগ্যের হাতে শিশুকে সঁপে দিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়লেন। নীল নদের তীরে এক নির্জন ঘাটে এসে শিশুকে সুইয়ে ‍দিয়ে তারা বাড়ি ফিরে গেলেন।



সেই নদীর ঘাটে প্রতিদিন গোসল করতে আসত ফেরাউনের স্ত্রী। ফুটফটে সুন্দর একটা বাচ্চাকে একা পড়ে থাকতে দেখে তার মায়া হল। তাকে তুলে নিয়ে এল রাজপ্রাসাদে। 

তার পর সেই শিশু সন্তানকে নিজের সন্তানের মত স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করে তুলতে লাগল। রাণী শিশুর নাম রাখল মূসা।


এ বিষয়ে আরেকটি কাহিনী প্রচলিত। মূসার মা জোশিবেদ জানতেন প্রতিদিন ফেরাউনের স্ত্রী সখিদের নিয়ে নদীতে স্নান করতে আসেন। 

একদিন পথের ধারে শিশু মূসাকে একটা ঝুড়িতে করে শুইয়ে রেখে দিলেন। নিজে গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন। 

কিছুক্ষন পর রাণী সেই পথ দিয়ে স্নান করতে যাবার সময় দেখতে পেল মূসাকে। পথের পাশে ফুটফুটে একটা শিশুকে পড়ে থাকতে দেখে তার মায়া হল।

তাড়াতাড়ি মূসাকে কোলে তুলে নিল। জোশিবেদকেই মূসার ধাত্রী হিসেবে নিয়োগ করে রাজকুমারী। 

নিজের পরিচয় গোপন করে রাজপ্রাসাদে মূসাকে দেখা শুনা করতে থাকে জোশিবেদ। মা ছাড়া মূসা আর কোনা নারীর স্তন্য পান করেনি।


ধীরে ধীরে কৈশর থেকে যৌবনে পা দিলেন মূসা। ফেরাউনের অত্যাচার বেড়েই চলছিল। ইহুদিদের উপর এ অত্যাচার ভালো লাগত না মূসার। 

পুত্রের মনোভাব জানতে পেরে একদিন জোশিবেদ তার কাছে নিজের পরিচয় দিলেন। তার পর থেকে মূসার অন্তরে শুরু হল নিধারুন যন্ত্রনা।


একদিন রাজপথ ‍দিয়ে যাচ্ছিলেন মূসা। এমন সময় তার চোখে পড়ল এক হতভাগ্য ইহুদিকে নির্মমভাবে প্রহার করছে তার মিসরীয় মনিব। 

এই দৃশ্য দেখে আর স্থির থাকতে পারলেন না মূসা। তিনি সেই ইহুদিকে উদ্ধার করার জন্য নিজের হাতে তরবারী দিয়ে আঘাত করলেন মিসরীর মনিবকে। 

সেই আঘাতে মারা গেল মিসরীয় লোকটি। ইহুদী লোকটি চার দিকে এ কথা টি প্রকাশ করে দিল। গুপ্ত চররা ফেরাউনকে গিয়ে সংবাদ টি দিতেই ক্রোধে ফেটে পড়লেন ফেরাউন।

তিনি বুঝতে পারলেন রাজকন্যা মূসাকে মানুষ করলেও তার শরীরে বইছে ইহুদী রক্ত, তাই নিজের ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচার হতে দেখে মিসরীয় কে হত্যা করেছে। 

একে যদি মুক্ত রাখা হয় তাহলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। তখনই সৈনিকদের ডেকে হুকুম দিলেন, যেখান থেকে হোক মূসাকে বন্দী করে নিয়ে এস।


ফেরাউনের আদেশ শুনে আর বিলম্ভ করলেন না মূসা। তৎক্ষনাৎ নগর ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়লেন মূসা।

দীর্ঘ পথ শ্রমে মূসা ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ছিলেন। তার চোখে পড়ল দূরে একটি কুয়ো। কুয়োর সামনে সাতটি মেয়ে তাদের ভেঁড়া গুলো কে পানি খাওয়াচ্ছিল। 

হঠাৎ একদল মেষ পালক সেখানে এসে মেয়েদের কাছ থেকে জোর করে ভেঁড়া গুলিকে কেড়ে নিল। সাথে সাথে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল সাত বোন। 


তাদের চিৎকার শুনে ছুটে এলেন মূসা। তার পর মেষ পালকদের কাছ থেকে সব কটা ভেঁড়া উদ্ধার করে মেয়েদের ফিরিয়ে দিলেন। মেয়েরা তাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বাড়ি ফিরে গেল।

সাত বোনের বাবার নাম ছিল রুয়েন। তারা বাড়ি পিরে তাদের বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলল। তাদের বাবা তাদের কে বললেন পরদিন মূসার সাথে দেখা হলে তাকে বাড়িতে ডেকে আনতে।

পরদিন সাত বোন এসে মূসাকে তাদের বাবার আমন্ত্রনের কথা জানাল। মূসা তাদের কথা মত তাদের বাবার আমন্ত্রনে তাদের সাথে বাড়িতে গেলেন। 

তার পরনের মূল্যবান পোশাক, সম্ভ্রমপূর্ণ ব্যবহার দেখে সকলেই মুগ্ধ হয়ে গেল। রুয়েন তার পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই কোন কথা গোপন করলেন না মূসা। অকপটে নিজের পরিচয় বলে দিলেন।

রুয়েন তাকে চিনতে পারলেন এবং তার ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিলেন। কিছুদিন পর একমেয়ের সাথে তার বিবাহের প্রস্তাব দিলেন। 

মূসা রাজি হয়ে গেলেন এবং রুয়েনের এক মেয়ের সাথে মূসার বিবাহ সম্পন্ন হলো।

তাদের সাথে থাকতে থাকতে অল্প কিছুদিনের মধ্যে মেষ চরানো শিখে পেললেন মূসা। এক নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মানেয়ে নিলেন। 

দেখতে দেখতে বেশ কয়েক বছর কেটে গেল। ও দিকে মিশরে ইহুদিদের অবস্থা ক্রমশই দূর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। এখানে পশু পালকের জীবন যাপন করলেও স্বজাতীর কথা ভুলতে পারেন নি মূসা। মাঝে মাঝেই তার সমস্ত অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠত।

একদিন মেষের পাল নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে নির্জন পাহাড়ের প্রান্তে এসে পৌঁছলেন মূসা। সামনেই বেশ কিছু গাছ পালা। হঠাৎ মূসা দেখলেন সেই গাছ পালা আর পাহাড়ের মধ্য থেকে এক আলোকছটা বেরিয়ে এল। 

এক তীব্র আলো মনে হল দুচোখ যেন জলসে যাচ্ছে। তবুও তিনি স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন সেই আলোর দিকে। তার মনে হলো ঐ আলো যেন তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। 

এক সময় শুনতে পেলেন সেই আলোর মধ্য থেকে এক অলৌকিক কণ্ঠস্বর ভেসে এল, মূসা....মূসা....।

চমকে উঠলেন মূসা। কেউ তারই নাম ধরে ডাকছে। তৎক্ষনাৎ সাড়া দিলেন, কে আপনি আমায় ডাকছেন? সেই অলৌকিক কণ্ঠস্বর বলে উঠল, আমি তোমার ও তোমার পূর্ব পুরুষদের একমাত্র ঈশ্বর।

ঈশ্বর তার সাথে কথা বলছেন, এ যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মূসা। ভীত হয়ে মাটিতে নতজানু হয়ে বসে পড়লেন। আমার কাছে আপনার কি প্রয়োজন প্রভু?

দৈব কণ্ঠস্বর বলল, তুমি আমার প্রতিনিধি হিসেবে মিশরে যাও। সেখানে ইহুদিরা অমানুষিক নির্যাতন ভোগ করছে। তুমি ইহুদিদের মুক্ত করে নতুন দেশে নিয়ে যাবে।

মূসা বললেন আমি কেমন করে তাদের মুক্ত করব?

দৈববাণী বলল, আমি অদৃশ্যভাবে তোমাকে সাহায্য করব। তুমি ফেরাউনের কাছে গিয়ে বলবে, আমিই তোমাকে প্রেরণ করেছি। সকলেই যেন তোমার আদেশ মেনে চলে।

মূসা বললেন, কিন্তু যখন তারা জিজ্ঞেস করবে ঈশ্বরের নাম তখন কি জবাব দিব?

প্রথমেই ঈশ্বর তার নাম প্রকাশ না করলেও পরে তিনি বললেন তিনি এই বিশ্ব জগতের স্রষ্টা আল্লাহ।

মূসা অনুভব করলেন তার নিজের শক্তিতে নয়, আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিতেই তাকে সমস্ত কাজ সমাধান করতে হবে। এতদিন আল্লাহ সম্বন্ধে তার কোন স্পষ্ট ধারণা ছিল না। 

এই প্রথম অনুভব করলেন আল্লাহর নির্দিষ্ট কাজের জন্যই তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। আর আল্লাহ তার একমাত্র ঈশ্বর।

এর কয়েকদিন পর দ্বিতীয়বার ঈশ্বরের আদেশ পেলেন মূসা। তিনি পূনরায় আবির্ভূত হলেন মূসার সামনে। তার পর বললেন তোমার উপর আমি প্রসন্ন হয়েছি। 

তুমিই পারবে ইহুদি জাতিকে এই সংকট থেকে উদ্ধার করতে। আর বিলম্ব কর না, যত শীঘ্র সম্ভব রওনা হও মিশরে। 

অল্প কয়েকদিন পর স্ত্রী-সন্তানদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মিশরের পথে যাত্রা করলেন মূসা।

যথাসময়ে মিশরে গিয়ে পৌছলেন মূসা। গিয়ে দেখলেন সত্যি সত্যিই ইহুদিরা অবর্ণনীয় দুরবস্থার মধ্যে বাস করছে।

মূসা প্রথমেই সাক্ষাৎ করলেন ইহুদিদের প্রধান নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে। তাদের সকলকে বললেন ঈশ্বরের আদেশের কথা। 

মূসার আচার-আচরণ, তার ব্যক্তিত্ব, আন্তারিক ব্যবহার, গভীর আত্মপ্রত্যয় দেখে সকলেই তাকে বিশ্বাস করল।

মূসা বললেন, আমরা ফেরাউনের কাছে গিয়ে দেশ ত্যাগ করার অনুমতি প্রার্থনা করব। মূসা তার ভাই এ্যাবন ও কয়েকজন ইহুদি নেতাকে সাথে নিয়ে হাজির হলেন ফেরাউনের দরবারে। 

মূসা জানতেন সরাসরি দেশত্যাগের অনুমতি চাইলে কখনই ফেরাউন সেই অনুমতি দেবে না। তাই তিনি বললেন, সম্রাট, আমাদের স্রষ্টা আদেশ দিয়েছেন, সমস্ত ইহুদিকে মরুপ্রান্তরে এক পাহাড়ে গিয়ে প্রার্থনা করতে। আপনি যদি কয়েক দিনের জন্য সেখানে যাবার অনুমতি দেন।

ফেরাউন মূসার অনুরোধে সাড়া দিলেন। ক্রুদ্ধ স্বরে বলে উঠলেন, তোমাদের আল্লাহর আদেশ আমি মানি না। তোমরা মিশর ত্যাগ করে কোথাও যেতে পারবে না।

মূসা বললেন, আমরা যদি মরুভূমিতে গিয়ে প্রার্থনা না করি তবে তিনি আমাদের উপর ক্রুদ্ধ হবেন। হয়ত আমাদের সকলকে ধ্বংস করে ফেলবেন।

ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এলেন মূসা। কি করবেন কিছুই ভাবতে পারছিলেন না। শেষে নিরুপায় হয়ে আল্লাহর কাছে আকুল হয়ে প্রার্থনা করলেন। 

তার প্রার্থনায় সাড়া দিলেন আল্লাহ। তিনি মূসা কে বললেন, তোমার ভাই এ্যারন কে বল, সে যেন নদী, জলাশয়, পুকুর, ঝর্নায় গিয়ে তার জাদু দন্ড স্পর্শ করে, তাহলেই দেখবে সমস্ত পানি রক্ত হয়ে গিয়েছে।

আল্লাহর নির্দেশে এ্যারন মিসরের সমস্ত পানীয় জল কে রক্তে রুপান্তরিত করে ফেলল। ফেরাউন আদেশ দিলেন মাটি খুড়ে পানি বার কর।

সৈনিকরা অসংখ্য কূপ খুঁড়ে ফেলল। সকলে সেই জল পান করতে আরম্ভ করল। এ্যারনের জাদু বিফল বিফল হতেই মূসা পুনরায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন।

এই মিশর জুড়ে ব্যাঙের মহামারী দেখা গেল। তার পঁচা গন্ধে লোকের প্রানান্তরক অবস্থা। কেউ আর ঘরে থাকতে পারে না। 

সকলে গিয়ে ফেরাউনের কাছে নালিশ জানাল। নিরুপায় হয়ে ফেরাউন ডেকে পাঠালেন মূসাকে। বললেন, তুমি ব্যঙের মড়ক বন্ধ কর। আমি তোমাদের মরুভূমিতে গিয়ে প্রার্থনা করার অনুমতি দেব।

মূসার ইচ্ছায় ব্যঙের মড়ক বন্ধ হলেও, ফেরাউন নানা অজুহাতে ইহুদিদের যাওয়ার অনুমতি দিলেন না। নিরুপায় হয়ে মূসা আবার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। 

ফেরাউনের এই আচরণে এইবার ভয়ংকর ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন আল্লাহ। সমস্ত মিশর জুড়ে শুরু হল ঝড়-ঝঞ্ঝা বৃষ্টি মহামারী। তবুও ফেরাউন অনুমতি দিতে চান না।

এইবার আল্লাহ নির্মম অস্ত্র প্রয়োগ করলেন। হঠাৎ সমস্ত মিশরীয়দের প্রথম পুত্র সন্তান মারা পড়ল। দেশ জুড়ে শুরু হল হাহাকার। 

সমস্ত মিশরীয়রা দলবদ্ধভাবে ফেরাউনের কাছে গিয়ে দাবি জানাল, ইহুদিদের দেশ ছাড়ার অনুমতি দিন। না হলে আরও কি গুরুতর সর্বনাশ হবে কে জানে।

ভয় পেয়ে গেলেন ফেরাউন। ফেরাউন মূসা কে ডেকে বললেন, প্রার্থনা করার জন্য তোমাদের কে মরুভূমিতে যাবার অনুমতি দিচ্ছি। 

যদি মনে কর তোমাদের যা কিছু আছে, গৃহপালিত গবাদি পশু, জীবজন্তু, জিনিস পত্র সব সাথে নিয়ে যেতে পার।

দেশত্যাগের অনুমতি পেয়ে ইহুদিরা সবাই আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠল। তারা সকলেই মূসাকে তাদের নেতা বলে স্বীকার করে নিল।

মিশর ছাড়াও মাকুম নগরে বহু ইহুদি বাস করত। সকলে দলবদ্ধভাবে মূসাকে অনুসরণ করল।

মূসা জানতেন আল্লাহর শাস্তির ভয়ে ফেরাউন দেশ ত্যাগের অনুমতি দিলেও, তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করবেন যাতে তাদের যাত্রা পথে বাধা সৃষ্টি করা যায়। তাই যথা সম্ভব সতর্কভাবে পথ চলতে লাগলেন।

কয়েকদিন চলার পর তারা সকলেই এসে পড়ল লোহিত সাগরের তীরে।

এদিকে ইহুদিরা মিশর ত্যাগ করতেই ফেরাউনের পরিবর্তন ঘটল। যেমন করে তাদের ফিরিয়ে নিয়ে এসে ক্রীতদাসে পরিণত করতে হবে। তৎক্ষণাৎ ইহুদিদের বন্দি করবার জন্য বিশাল এক সৈন্যবাহিনীকে পাঠালেন ফেরাউন।

এদিকে দূর থেকে মিশরীয় সৈন্যদের দেখতে পেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ল সমস্ত ইহুদিরা। সামান্যতম বিচলিত হলেন না মূসা।

প্রার্থনায় বসলেন মূসা। প্রর্থনা শেষ হতেই দৈব বাণী হল, মূসা, তোমার হাতের দণ্ড তুলে সমুদ্রের মধ্য দিয়ে যাবে তোমাদের কে সমুদ্রের পানি স্পর্শ করবে না।

মূসা তার হাতের দণ্ড তুলে সমুদ্রের সামনে এসে দাঁড়াতেই সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। তার মধ্য দিয়ে প্রসারিত হয়েছে প্রশান্ত পথ। সকলের আগে মূসা রওনা হলেন। তার পিছনে সমস্ত নারী-পুরুষের দল সেই পথ ধরে এগিয়ে চলল। 

তারা কিছুদূর যেতেই মিশরীয় সৈন্যরা এসে পড়ল সমুদ্রের তীরে। ইহুদিদের সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে যেতে দেখে তারাও তাদের অনুসরণ করে সেই পথ ধরে এগিয়ে চলল। 

সমস্ত মিশরীয় বাহিনী নেমে আসতেই আল্লাহর নির্দেশ শুনতে পেলেন মূসা, তোমার হাতের দণ্ড পিছনে পিরে নামিয়ে দাও। মূসা তার হাতের দণ্ড নিচু করতেই সমুদ্রের জলরাশি এসে আছরে পড়ল মিশরীয় সৈন্যদের উপর। 

মুহূর্তেই বিশাল সৈন্য বাহিনী সমুদ্রের অতল গহরে হারিয়ে গেল। ইতিমধ্যে ইহুদিরা নিরাপদে তীরে গিয়ে পৌছলেন। মূসা সকলকে নিয়ে এগিয়ে চললেন। 

সামনে বিশাল মরুভূমি। সামান্য পথ অতিক্রম করতেই তাদের সঞ্চিত পানি এবং খাবার ফুরিয়ে গেল। 

মরুভূমির বুকে কোথাও পানির চিহ্ন মাত্র নেই। ক্রমশই সকলে তৃষ্ণার্ত এবং ক্ষুদার্ত হয়ে পড়ছিল। অনেকে আর অগ্রসর হতে চাইছিল না।

মূসা বিচলিত হয়ে পড়লেন। এত গুলো মানুষ কে কোথা থেকে তৃষ্ণার পানি দিবেন। কিছুদূর যেতেই এক যায়গায় পানি পাওয়া গেল। 

এত দূর্গন্ধ সেই পানি কার সাধ্য তা মুখে দেয়। প্রার্থনায় বসলেন মূসা। প্রার্থনা শেষ করে আল্লাহর নির্দেশে কিছু গাছের পাতা ফেলে দিলেন সেই পানির মধ্যে। 

সাথে সাথে সেই পানি সুস্বাধু পানিয় হয়ে উঠল। সকলে তৃষ্ণা মিটিয়ে সব পাত্র ভলে নিল। যারা মূসা কে দোষারপ করছিল, তারা অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা চাইল। 

সকলে মূসা কে তাদের ধর্ম গুরু এবং নেতা হিসেবে স্বীকার করে নিল। সকলে তার নির্দেশ মতে এগিয়ে চলল। কিছুদিনের মধ্যে সমস্ত খাবার ফুরিয়ে গেল। 

আসে পাশে কোথাও কোন খাবারের সন্ধান পাওয়া গেল না। খিদের জ্বালায় সকলে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। আবার তারা দোষারপ করতে আরম্ভ করল মূসাকে। তোমার জন্যই আমাদের এত কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে।

মূসা সকলকে শান্ত করে বললেন, তোমরা ভুলে গেছ আমাদের রব আল্লাহর কথা? তিনে ফেরাউনকে তোমাদের দেশ ত্যাগের অনুমতি দিতে বাধ্য করেছেন। 

তিনি সমুদ্র কে দ্বিখণ্ডিত করেছেন, সৈন্যদের হাত থেকে তোমাদের কে রক্ষা করেছেন। তোমাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করেছেন। তবুও তোমরা তার শক্তিতে সন্দেহ প্রকাশ করছ।

মূসার কথা শেষ হতেই কোথা হতে সেখানে উড়ে আসে অসংখ্য পাখির ঝাঁক। ইহুদিরা ইচ্ছা মত পাখি মেরে মাংস খায়। আর কারও মনে কোন সংশয় থাকে না। 

মূসা তাদের অবিসংবাদিত নেতা। সকলে শপথ করে জীবনে মরনে তারা মূসার সমস্ত আদেশ মেনে চলবে।

মূসা সমস্ত ইহুদিদের নিয়ে এলেন এফিডিম নামে এক নির্জন প্রান্তে। চারদিকে ধু ধু বালি, মাঝে মাঝে ছোট পাহাড়, কোথাও পানির কোন উৎস নাই।







স্যার আইজ্যাক নিউটন | sir isaac newton life | Nhrepon.com


স্যার আইজ্যাক নিউটন

(the life of isaac newton)


(isaac newton born and death) জন্ম: ১৬৪২ এবং মৃত্যু: ১৭২৭


sir-isaac-newton
sir isaac newton


১৬৪২ সালের বড় দিনে আইজাক নিউটন ( isaac newton ) জন্ম গ্রহন করেন। তার জন্মের কয়েক মাস আগেই পিতার মৃত্যু হয়। জন্মের সময় নিউটন (newton) ছিলেন খুব দুর্বল শীর্ণকায় আর ক্ষুদ্র আকৃতির। ধাই তার জীবনের আশা সম্পুর্ণ ত্যাগ করেছিল। হয়ত বিশ্বের প্রয়োজনেই বিশ্ববিধাতা তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন।





বিধবা মায়ের সাথেই নিউটনের জীবনের প্রথম তিন বছর কেটে যায়। এই সময় তাঁর মা বারনাবাস নামে এক ভদ্রলোকের প্রেমে পড়ে তাকে বিবাহ করেন। নব বিবাহিত দম্পতির জীবনে শিশু নেহাতই অবাঞ্ছিত বিবেচনা করে মা শিশু নিউটন কে তাঁর দাদীর কাছে রেখে দেন।





১২ বছর বয়সে নিউটন কে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হলো। জন্ম থেকেই রুগ্ন ছিলেন নিউটন। তবু তার দুষ্টুমি কিছু কম ছিল না। কিন্তু শিক্ষকরা সকলেই তার অসাধারণ মেধার জন্য ভালোবাসতেন। স্কুলের অধ্যক্ষের শালা প্রায়ই স্কুলে পৌছতে দেরি করত।





isaac newton inventions:- একদিন নিউটন বললেন, স্যার, আমি আপনার জন্য ঘড়ি তৈরি করে দিচ্ছি, তাহলে ঘড়ি দেখে ঠিক সময়েই স্কুলে আসতে পারবেন। নিউটন ঘড়ি তৈরি করলেন। ঘড়ির উপরে থাকত পানির পাত্র। প্রতি দিন নির্দিষ্ট পরিমান পানি সেই পাত্রে ঢেলে দেওয়া হত। তাঁর থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঘড়ির কাঁটার উপর পড়ত এবং ঘড়ির কাঁটা আপন গতিতেই এগিয়ে চলত।





ভাগ্যের পরিহাসে নিউটনের সৎ বাবা মারা গেলেন। মার একার পক্ষে ক্ষেত জমি জমা দেখা শুনা করা সম্ভব হল না। স্কুল ছাড়িয়ে চৌদ্দ বছরের নিউটন কে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এলেন। ভাগ্য ক্রমে চাচা উইলিয়াম ভাইপোর জ্ঞান তৃষ্ণায় মুগ্ধ হয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলেন।





চাচা কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ভাইপোকে আবার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। এক বছর পর নিউটন ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন। শুরু হল এক নতুন জীবন। ছাত্র হিসেবে নিউটন ছিলেন যেমন অধ্যবসয়ী, পরিশ্রমী তেমনি অসাধরণ মেধাসম্পন্ন।





তাঁর সব চেয়ে বেশি দখল ছিল অংকে। যে কোন জটিল অঙ্কের সমাধান খুব সহজেই করে ফেলতেন। তবুও অঙ্কের প্রতি তাঁর কোন  আকর্ষণ ছিল না। প্রকৃতির দূর্গেয় রহস্য তাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করত। নিউটন বিশ্বাস করতেন একমাত্র বিজ্ঞানের মাধ্যমেই প্রকৃতির এই গোপন রহস্য কে উদঘাটন করা সম্ভব। অবশেষে ১৯৬৫ সালে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।





কলেজে ছাত্র থাকা কালীন অবস্থাতেই তিনি অঙ্ক শাস্ত্রের কিছু জটিল তথ্যের আবিষ্কার করেন- বাইনমিয়াল থিওরেম (Binomial theoream) ফ্লাক্সন (Fluxious) যা বর্তমানে ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাস (Interegal calculus) নামে পরিচিত।



এছাড়া কঠিন পদার্থের ঘনত্ব ( The mathod for calculating the area of curves or the volume of solids.)।







১৯৬৬ সাল-এই সময় নিউটন একটি চিঠিতে লিখেছেন আমি (Fluxious) পদ্ধতি উদ্ভাবনের সাথে সাথেই মধ্যাকর্ষণ শক্তির সম্বন্ধে চিন্তা ভাবনা করতে শুরু করেছি। ভাবতে অবাক লাগে তখন নিউটনের কয়স মাত্র চব্বিশ।



নিউটন চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহ নক্ষত্রের গতি নির্ণয় করতে সচেষ্ট হন। কিন্তু তার উদ্ভাবিত তত্ত্বের মধ্যে কিছু ভুল ত্রুটি থাকার জন্য তাঁর প্রচেষ্টা অসম্পুর্ণ ও ভুল থেকে যায়।



এই সব অসাধারণ কাজে ও মৌলিক তত্ত্বের জন্য সেই তরুন বয়সেই নিউটনের খ্যাতি পন্ডিত মহলে ছড়িয়ে পড়ল। ১৯৬৭ সালে তার কৃতিত্বের জন্য ট্রিনিটি কলেজ তাকে ফেলো হিসেবে নির্বাচন করলেন। একজন ২৫ বছরের তরুনের পক্ষে এ এক দূর্লভ সম্মান।



এইবার তিনি আলোর প্রকৃতি ও তার গতি পথ নিয়ে গবেষনার কাজ শুরু করলেন এবং এই কাজের প্রয়োজনেই তিনি তৈরি করলেন প্রতিফলক টেলিস্কোপ ( Reflecting telescope)। পরবর্তীকালে মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণার প্রয়োজনে যে উন্নত ধরনের টেলিস্কোপ আবিস্কৃত হয়, তিনিই তার অগ্রগামী পথিক।



নিউটন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রিনিটি কলেজের গনিতের অধ্যাপক হিসেবে নির্বাচিত হলেন। সেই সাথে আলোর বর্ণচ্ছাটা নিয়ে গবেষণার কাজ আরম্ভ করলেন। ইংল্যান্ডের রয়াল সোসাইটি ও নিউটনের বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে মুগ্ধ হয়ে তাকে সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত করলেন। তখন তার বয়স মাত্র ২৯।





ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের পাশে তার স্থান হল। সোসাইটির প্রথম সভায় তার আলোকতত্ত্ব নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করলেন। তার বিষয়বস্তুর সাথে একমত হতে না পারলেও সোসাইটির সমস্ত বিজ্ঞানীই উচ্চ কন্ঠে তার বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের প্রসংসা করলেন। তিনি যেন এক আত্মমগ্ন সাধক।





নিজের স্বপ্নে হয়ে আছেন। নিজের বেশবাশ সাজগোজ কোন দিকেই ভ্রুক্ষেপ নেই। প্রায়ই দেখা যেত তিনি কলেজে আসছেন, তার জামার বোতাম খোলা, পায়ের মোজা গুটিয়ে আছে, এলোমেলো চুল। তন্ময় হয়ে চলেছেন কোন নতুন বৈজ্ঞানিক ভাবনায় বিভোর হয়ে।



কল্পনা প্রবণ এই মনের জন্যই বাস্তব জগত সম্বন্ধে তাঁর ধারনা ছিল অস্পষ্ট। একদিন একজন লোক তার বাড়িতে এসে একটা প্রিজম ( তিন কোনা কাঁচ) দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল এর দাম কত হতে পারে? পিজমের বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব বিবেচনা করে নিউটন বললেন, এর মূল্য নির্ণয় করা আমার সাধ্যের বাহিরে। লোকটি নিউটনের কথা শুনে অস্বাভিক বেশি দামে প্রিজম টি বিক্রি করতে চাইল। কোন দরদাম না করে সেই দামে প্রিজম টি কিনে নিলেন নিউটন। নিউটনের বাড়িওয়ালা সব কথা শুনে বললেন, তুমি নেহাতই বোকা। এটা সাধারণ একটা কাঁচ, এই কাঁচের যা ওজন হবে সেই দামে এটা কেনা উচিত ছিল।



নিউটিন কোন কথা না বলে শুধু হাসলেন। পরবর্তী কালে এই প্রিজম থেকেই উদ্ভাবন করেন বর্ণ তত্ত্ব (Theory of colour)।



কলেজের ছুটির অবকাশে মায়ের কাছে গিয়েছেন নিউটন। দিনের বেশির ভাগ সময় বাগানের মধ্যে বসে থাকেন। প্রাণ ভরে উপভোগ করেন প্রকৃতির রুপ রস গন্ধ। একদিন হঠাৎ সামনে খসে পড়ল একটা আপেল। মুহূর্তে তার মনের কোণে উকি মারে এক জিজ্ঞাসা- কেন আপেল টি আকাশে না উঠে মাটিতে পড়ল? এই জিজ্ঞাসাই মানুষের চিন্তার জগতে এক যুগান্তর নিয়ে এল। জন্ম নিল মধ্যাকর্ষণ তত্ত্বের ।





যদিও এই চেন্তার সূত্রপাত হয়েছিল বহু পূর্বেই। তার পূর্ণ পরিনতি ঘটল ১৬৮৭ সালে। নিউটন প্রকাশ করলেন তার কালজয়ী গ্রন্থ ( Mathemetical principles of natural philosophy) । মানুষ মধ্যাকর্ষণ শক্তির কথা সামান্য জানলেও এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে রয়েছে যে তার অস্তিত্ব সে কথা কেউ জানত না। মধ্যাকর্ষণ শক্তির এই আকর্ষণ গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবী কে একসূত্রে বেধে রেখেছে। একদিন রাতে এক বন্ধুর বাড়িতে তার নিমন্ত্রন হয়েছে। কাজ করতে করতে রাত হয়ে গিয়েছে।





হঠাৎ তার মনে পড়ল বন্ধুর বাড়িতে যেতে হবে। তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বার হলেন নিউটন। যখন বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে পৌছলেন তখন গভীর রাত। চার‍দিক অন্ধকার। নিউটন বঝতে পারলেন নিমন্ত্রন পর্ব আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। বাড়ি পিরে এসে আবার কাজে বসলেন। রাতে খাওয়ার কথা মনেই হলো না তার।



এই নিরলস গবেষনার মধ্যে দিয়েই নিউটন প্রমান করলেন, If the force varied as the invers square, the orbit would be an elips with the entire of the force in one focus- এই আবিষ্কারের মাধ্যমে মধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার কাজ সহজ সাধ্য হলো। এতদিন মানুষের জানা ছিল না চন্দ্র সূর্যের সঠিক আয়তন। নিউটন তা নির্ণয় করলেন।



প্রতিষ্ঠা হলো মধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব। এই তত্ত্বের যাবতীয় বিবরণ তিনি লিখলেন তার প্রিন্সিপিয়া গ্রন্থ টিতে ( Principia Mathematics) । যখন এই বই প্রকাশিত হলো তখন অধিকাংশ মানুষের কাছেই মনে হলো এই বই যেমন জটিল তেমনি দূর্বোধ্য। নিউটনের এক দার্শনিক বন্ধু একদিন নিউটন কে জিজ্ঞেস করলেন, কিভাবে তোমার লেখার অর্থ বোঝা সম্ভব?



নিউটন তাকে একটি বইয়ের তালিকা দিয়ে বললেন, আপনি আগে এই বই গুলো পড়ুন তাহলে আমার তত্ত্ব বোঝার কাজ সহজ হবে। ভদ্র লোক তালিকা টি দেখে বললেন, নিউটনের তত্ত্ব বোঝা আমার সাধ্যের বাহিরে। কারণ প্রাথমিক তালিকার এইকটি বই পড়া শেষ করতেই আমার অর্ধেক জীবন কেটে যাবে।



Philosophiac naturalis principia mathematica প্রকাশিত হয় ১৬৪৭ সালে। ল্যাটিন ভাষায় লেখা এই বইটি তিন খন্ডে বিভক্ত।



প্রথম খন্ডে নিউটন গতি সূত্র সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। ‍তিনটি গতি সূত্র হলো, (১) প্রত্যেকটি বস্তু চিরকাল সরল রেখা অবলম্বন করে সমবেগে চলতে থাকে। (২) বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হারের সমানুপাতিক এবং বল যেদিকে ক্রিয়া করে, ভরবেগের পরিবর্তন ও সে দিকে ঘটে। (৩) পত্যেকটি ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে।



প্রিন্সিপিয়া গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ডে তিনি গ্যাস, ফ্লুইড বস্তুর গতির কথা আলোচনা করেছেন। গ্যাসকে কতকগুলো স্থিতিস্থাপন অণুর সমষ্টি ধরে নিয়ে তিনি বয়েলের সূত্র প্রমাণ করেন। গ্যাসের উপর চাপের প্রভাব বিশ্লেষণ করতে গিয়ে পরোক্ষ ভাবে শব্দতরঙ্গের গতি বেগ ও নির্ধারণ করেন। তার এই তত্ত্বে কিছু ভুল ত্রুটি ছিল। উত্তর কালে অন্য বিজ্ঞানীরা এইসব ভুল-ত্রুটি সংশোধন করেন। তৃতীয় খন্ডে মধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে খুঁটিনাটি আলোচনা করেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবেই সূর্যকে কেন্দ্র করে গ্রহ গুলো ঘুরছে।





তেমনি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে চাঁদ। দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষীয় বল তাদের ভরের সমানুপাতিক ও দূরুত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরুত্ব পৃথিবীর ব্যসার্ধের ৬০ গুন। এই দূরুত্ব থেকে চাঁদ পৃথিবী কে প্রদক্ষিন করছে। নিউটন লক্ষ করেছিলেন সূর্য ও গ্রহ গুলোর মধ্যে প্রত্যেকটি গ্রহ ও তাদের উপগ্রহ গুলোর পৃথিবীর সমুদ্র ও চাঁদ এবং সূর্যের মধ্যে এমনকি জোয়ার-ভাটা ও সাধারণ ভাবে জগতের যে কোন দুটি বস্তুর মধ্যে একই মহাকর্ষ শক্তি কার্যকরী। এছাড়াও তিনি আরও একটি সমস্যার সমাধান করেছিলেন।





তিনি প্রমাণ করলেন একটি সমরুপ গোলাকার বস্তুর ভিতরের প্রতিটি কণা যদি বাইরের একটি কণাকে মধ্যাকর্ষণ বলের সূত্র অনুসারে আকর্ষণ করে তাহলে বাইরের কণাটির উপর যে বল কাজ করবে সেটি এমন হবে যেন গোলাকার বস্তুটির সমস্ত ভর তার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত।



তাঁর প্রতি সমালোচনা করা হলো, তিনি তার তত্ত্বে বিশ্বপ্রকৃতিকে যেভাবে বিবেচনা করেছেন তা থেকে মনে হয় এ সমস্তই যেন এক বিশৃঙ্খল মনের প্রাণহীন সৃষ্টির কাহিনী।



নিউটন তার জবাবে বললেন, প্রকৃত পক্ষে এই বিশ্বপ্রকৃতি এমন সুশৃঙ্খল সুসামঞ্জস্যভাবে সৃষ্টি হয়েছে মনে হয় এর পশ্চাতে কোন ঐশ্বরিক স্রষ্টা রয়েছেন।



নিউটনের এই বিচিত্র মানসিকতার জন্য কোন মানুষই তাকে সহজভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। হয়ত নিজেই নিজের বিরাটতত্ত্বকে সঠিকভাবে চিনতে পারেনি। অসাধারণ আবিস্কারের পরও তিনি ছিলেন অসুখী মানুষ।



principia প্রকাশের পরই নিউটন সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে আসেন। যখন দ্বিতীয় জেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইলেন, তিনি তার সক্রিয় বিরোধী হয়ে উঠলেন। রাজপরিবারের উৎখাতের পর ১৬৯৪ সালে নতুন সংবিধান তৈরির জন্য যে কনভেনশন গড়ে উঠল, নিউটন তার সদস্য হলেন।



রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন নিউটন। ১৬৯০ সালে কনভেনশনের পরিসমাপ্তি ঘটল, নিউটনের রাজনৈতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটল।



১৭০৩ সালে নিউটনের জীবনে এল এক অভূতপূর্ব সম্মান। তিনি রয়াল সোসাইটির সভাপতি হলেন। আমৃত্যু ‍তিনি সেই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।



১৭০৫ সালে রাণী এ্যানি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেন। রাণীর পক্ষ থেকে নিউটন কে নাইটহুড উপাধিতে ভূষিত করা হল। এই সময় ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাস ( Differenctial calculus)- এর প্রথম আবিষ্কর্তা হিসাবে জার্মান দার্শনিক লিবনিজ (Leibniz /Leibnitz) এর সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন। ইংল্যান্ডের রয়াল একাডেমী জানতে পারে লিবনিজ Differenctial calculus- এর আবিষ্ককর্তা হিসাবে দাবি জানাচ্ছেন। রয়াল একাডেমির সদস্যরা ক্রোধে ফেটে ফড়ল। তাদের সভাপতির কৃতিত্বকে এক বিদেশী চুরি করে নিজের নামে প্রাচার করতে চাইছে। কারণ তারা বিশ্বাস করতেন নিউটনই প্রথম calculus- এর সম্ভাবনা, তার অস্তিত্ব সম্বন্ধে লিবনিজের কাছে বলেছিলেন। লিবনিজ একে উন্নত করেছে, সঠিক বিস্তৃতি ‍দিয়েছে কিন্তু আবিষ্কার করেনি।



তবে নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকদের মতে নিউটন ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের উদ্ভাবক হলেও লিবনিজের পদ্ধতি ছিল অনেক সহজ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। ১৭২৭ সাল, নিউটন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। চিকিৎসাতে কোন সুফল পাওয়া গেলো না। অবশেষে ২০ শে মার্চ মহাবিজ্ঞানী নিউটন তার প্রিয় অনন্ত বিশ্বপ্রকৃতির বুকে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেলেন। সাত দিন পর তাকে ওয়েস্ট মিনিস্টার এ্যাবিতে সমাধিস্থ করা হল।



সমস্ত দেশ অবনত মস্তকে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এই জ্ঞানতাপসকে। যদিও নিজেকে তিনি কখনও পন্ডিত বা জ্ঞানী ভাবেননি। মৃত্যুর অল্প কিছুদিন আগে তিনি লিখেছেন, ‍“পৃথিবীর মানুষ আমাকে কি ভাবে জানিনা, কিন্তু নিজের সম্বন্ধে আমি মনে করি আমি একটা ছোট ছেলের মত সাগরের তীরে খেলা করছি আর খুজে ফিরেছি সাধারনের চেয়ে সামান্য আলাদা পাথরের নুড়ি বা ঝিনুকের  খোসা। সামনে আমার পড়ে রয়েছে অনাবিষ্কৃত বিশাল জ্ঞানের সাগর”।



কাজের লোক | Kajer lok | bangla kobita | nhrepon.com

কাজের লোক

নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য



“মৌমাছি, মৌমাছি,
কোথা যাও নাচি' নাচি'
দাঁড়াও না একবার ভাই।''
“ওই ফুল ফোটে বনে,
যাই মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় তো নাই।''


“ছোট পাখি, ছোট পাখি,
কিচি-মিচি ডাকি ডাকি'
কোথা যাও বলে যাও শুনি?''
“এখন না ক'ব কথা,
আনিয়াছি তৃণলতা,
আপনার বাসা আগে বুনি।''


“পিপীলিকা, পিপীলিকা,
দল-বল ছাড়ি একা
কোথা যাও, যাও ভাই বলি।''
“শীতের সঞ্চয় চাই,
খাদ্য খুঁজিতেছি তাই
ছয় পায়ে পিল পিল চলি।''






"পারিব না" বাংলা কবিতা | Bangla kobita | Nhrepon.com

পারিব না

কালী প্রসন্ন ঘোষ


পারিব না এ কথাটি বলিও না আর

কেন পারিবে না তাহা ভাব এক বার,

পাঁচজনে পারে যাহা,

তুমিও পারিবে তাহা,

পার কি না পার কর যতন আবার

এক বারে না পারিলে দেখ শত বার।



পারিব না বলে মুখ করিও না ভার,

ও কথাটি মুখে যেন না শুনি তোমার,

অলস অবোধ যারা

কিছুই পারে না তারা,

তোমায় তো দেখি নাক তাদের আকার

তবে কেন পারিব না বল বার বার?



জলে না নামিলে কেহ শিখে না সাঁতার

হাঁটিতে শিখে না কেহ না খেয়ে আছাড়,

সাঁতার শিখিতে হলে

আগে তব নাম জলে,

আছাড়ে করিয়া হেলা, হাঁট বার বার

পারিব বলিয় সুখে হও আগুয়ান।


সফল মানুষ 'কাজী নজরুল ইসলাম' এর জীবনি | Biography of Kaji najrul islam | Nhrepon.com

কাজী নজরুল ইসলাম

জন্ম: ১৮৯৯ খ্রীঃ মৃত্যু: ১৯৭৬ খ্রীঃ




পারিবারিক সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেও যিনি আজীবন বাংলা কাব্য সাহিত্য চর্চায় ব্রতী ছিলেন যিনি ছিলেন বিস্ময়কর প্রতিবার অধিকারী যিনি বাংলা কাব্য সাহিত্যে প্রচন্ড বিপ্লব ঘটিয়ে ছিলেন যিনি দেশের স্বাধীনতা মানবিক মযা©দা প্রতিষ্ঠার জন্যে জালেম শাশক গোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কারাগারে বন্দী জীবন কাটিয়েছিলেন যার কাব্য সাহিত্যে ইসলামি ঐতিহ্য বলিষ্ঠ ব্যঞ্জনায় মূত© হয়ে উঠেছে যার কবিতা, হামদ, নাত, গজল ইসলামী গান প্রায় প্রতিটি বাঙালী মুসলিমের হৃদয়কে জাগরিত করেছে যিনি ছিলেন একাদারে শ্রমিক, সৈনিক, কবি সাহিত্যিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি এবং একজন খাটি দেশ প্রেমিক বাল্য কালে কাজী নজরুল ইসলাম এর ডাক নাম ছিল দুখু মিয়v| evsjv 1306 mv‡ji 11B ˆR¨ô ‡gvZv‡eK 1899 mv‡ji 25 †k †g ea©gvb †Rjvi Avmvb‡mvj gnKzgvi Pziywjqv MÖv‡g GK m¤£všÍ gymwjg cwiev‡i wZwb Rb¥ MÖnb K‡ib| Kwe GKvwaK fvM¨evb Kwei b¨vq †mvbvi PvgP gy‡L wb‡q Rb¥ jvf K‡ib wb| Pziæwjqvi KvRx esk GK Kv‡j LyeB m¤£všÍ wQj e‡U, wKšÍy †h mgq Kwe bRiæj Bmjvg wkï n‡q Avwef©~Z nb , †m mgq G eskwU weªwUk B÷ BwÛqv †Kv¤úvwbi bvbv iKg eÂbv I †kvl‡bi wkKvi n‡q AvwfRv‡Z¨i cðvrcU †_‡K m¤ú~Y© ùwjZ n‡q ˆ`b¨`kvi G‡Kev‡i P~ovšÍ ch©v‡q G‡m c‡owQj| AeY©bxq `ytL-Kó, jvÃbv-MÄbv , Acgvb Ges ggv©wšÍK `vwi‡`¨i ga¨ w`‡q Kwei evj¨, ˆKki Ges cÖvK †hŠeb †K‡U‡Q| wcZvi bvg KvRx dwKi Avn‡g` Ges gvZvi bvg Rv‡n`v LvZzb| ÒKvRxÓ n‡”Q Zv‡`i es‡ki Dcvwa| wcZv wQ‡jb ¯’vbxq gmwR‡`i Bgvg Ges gvRv‡ii gyZvIqvwjø| d‡j †QvU †ejv †_‡KB KvRx bRiæj Bmjvg Bmjvgx wPšÍv I fveavivi wfZi w`‡q eo nb|

"তোমার রুমাল" বাংলা কবিতা | Bangla kobita | Nhrepon.com



রুমাল

( তুমি যেটি দিলে)

তোমার রুমাল নয় গো, যেন তুমিই মোর পকেটে,
সুরসুরি লাগে মোর ‍দিলে তোমার হাসির ও দাপটে।
তুমি সদা থাক মোর মনের ও ভিতরে,
একটু ভালোবাসা ‍দিও সোহাগ ও আদরে।

পাশে রবে কি সখি তুমি মোর জিবনের ও তরে?
কত্ত ভালোবাসবো তোমায় হৃদয় উজাড় করে।
তুমি আমার মিষ্টি টিয়া ভালোবাসার কয়তরী,
ইচ্ছে করে বুকে লইয়া একটু আদর করি।

সোনা মুখে সোনা হাসি দেখবো আজীবন,
আদর সোহাগ ‍দিব তোমায় করিয়া যতন।
মিষ্টি মধুর শ্যামল কইন্না আর থেকো না দূরে,
অতি শিঘ্রই বুকের মানিক এসো মনের ঘরে।

বকের খাঁচায় তোমায় সখি বন্দি রাখিব,
কোন দিন ও তোমায় আমি নাহি হারবো।
¯^M© সুখে মধুর রসে ভরবে গো জীবন,
কোন ‍দিন ও হারিয়ে হবে গো মরণ।